শ্রী মূর্তির অসম্পূর্ণতায় শ্রীজগন্নাথদেব স্বপ্নে রাজা ইন্দ্রদুম্ন কে দর্শন দিয়ে জানালেন
শ্রী ধাম নবদ্বীপ এ আমরা দেখতে পাই জগন্নাথদেবের এক অনন্য রূপ যা সাধারণত দেখা যায় না।
নবদ্বীপ নৃসিংহ মন্দিরে জগন্নাথদেব এর শ্রী মূর্তি হস্তপদ সম্পূর্ণতায় এক
বিশেষ রূপ। বিগ্রহ টি প্রাচীন এবং এই বিশেষ রূপের অনেক গল্প শোনা যায়।
মন্দিরে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা ও রথযাত্রা উপলক্ষ্যে পূজা অর্চনার আয়োজন হয় তবে রথ যাত্রায় বিগ্রহ বের হয় না।
Nabadwip nrishinga mondir jagonnath
*********************************************
মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন শ্রীনীলমাধবের দর্শন না পেয়ে অনশনব্রত অবলম্বন করে
প্রাণত্যাগের সঙ্কল্প করলে শ্রীজগন্নাথদেব তাঁকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে
বললেন,- “তুমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না। তুমি আমাকে দারুব্রহ্মরূপে পাবে।
আমি সমুদ্রের চক্রতীর্থের সন্নিকটে ‘বাঙ্কিমুহান’ নামক স্থানে
দারুব্রহ্মরূপে ভাসতে ভাসতে উপস্থিত হব। সেখান থেকে তুমি আমাকে তুলে আনবে।”
স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে রাজা সৈন্যসামন্ত নিয়ে শ্রীদারুব্রহ্মকে উদ্ধার করতে
গেলেন। সেখানে তিনি শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মকৃত শ্রীদারুব্রহ্মকে দর্শন করলেন।
রাজা বলবান্ লোক ও হস্তির বল দিয়েও দারুব্রহ্মকে এতটুকু বিচলিত করতে পারলেন
না। শ্রীজগন্নাথদেব রাজাকে স্বপ্নে আবার দর্শন দিয়ে জানালেন, পূর্বে যে
সেবক নীলমাধবের পূজো করতেন তাঁকে এখানে আনয়ন করে একটি সুবর্ণ রথ
দারুব্রহ্মের সম্মুখে স্থাপন করতে হবে।
স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী নীলমাধবের
ভক্তদের আনা হল। বিশ্বাবসু শ্রীদারুব্রহ্মের একপার্শ্বে ও বিদ্যাপতি
ব্রাহ্মণ অন্যপার্শ্বে ধারণ করলেন। চতুর্দিকে চলল হরিনাম সংকীর্তন। রাজা
দারুব্রহ্মকে স্পর্শ করে তাঁকে রথারোহণ করতে প্রার্থনা করতে লাগলেন।
দারুব্রহ্ম রথারোহণ করলেন। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন রথখানিকে যথাস্থানে নিয়ে
আসলেন। ব্রহ্মা এস্থানে যজ্ঞ আরম্ভ করলেন; শ্রীনৃসিংহদেব যজ্ঞবেদীতে
অবস্থান করলেন। কথিত আছে যে যেখানে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেখানেই বর্তমান
শ্রীমন্দির অবস্থিত। এই মণ্ডপের পশ্চিমদিকে যে নৃসিংহদেব বিরাজমান আছেন,
তিনিই ‘আদি নৃসিংহদেব’।
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন দারুব্রহ্মকে
শ্রীমূর্তিরূপে প্রকট করার জন্য সুদক্ষ কারিগর আহ্বান করলেন; কিন্তু, কেউ
দারুব্রহ্মকে স্পর্শ করতে পারলেন না, তাঁদের হাতুরী-বাটাল খণ্ডবিখণ্ড হয়ে
গেল। অবশেষে যাঁর মূর্তি প্রকট হবে তিনিই স্বকৃপায় ‘অনন্ত মহারাণা’ নামে
আত্মপরিচয় দিয়ে বৃদ্ধ শিল্পীর ছদ্মাবরণ নিয়ে ২১ দিবসের মধ্যে শ্রীবিগ্রহ
প্রকট করার আশ্বাস প্রদান করলেন। তিনি জানালেন ঐ ২১ দিন তিনি একটি রুদ্ধ
গৃহে অবস্থান করে শ্রীমূর্তি তৈরী করবেন। নির্ধারিত সময়ের আগে কেউ দ্বার
উন্মোচন করতে পারবেন না বলেও তিনি জানান। ঐ বৃদ্ধ শিল্পীর উপদেশানুযায়ী
রাজা পূর্বে আহুত কারিগর দিয়ে তিনটি রথ তৈরী করে রাখলেন। দেখতে দেখতে ১৫
দিন গত হয়ে গেল। নিভৃতকক্ষে কারিগরের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে রাজা বৃদ্ধ
মন্ত্রীর নিষেধ উপেক্ষা করে রাণীর পরামর্শক্রমে মন্দিরের দ্বার উন্মোচন
করলেন। কিন্তু সেখানে বৃদ্ধ কারিগরকে আর দেখা গেল না। নিভৃত কক্ষের মধ্যে
পড়ে থাকতে দেখা গেল অসম্পূর্ণ তিনটি মূর্তি। শ্রীমূর্তির শ্রীহস্তের
অঙ্গুলিসমূহ ও শ্রীপাদপদ্ম অপ্রকাশিত ছিল। বৃদ্ধ মন্ত্রী রাজাকে জানালেন যে
ঐ কারিগর আর কেউ নন, তিনি স্বয়ং শ্রীজগন্নাথদেব,আপনার মূর্তি আপনিই গড়তে
তিনি বৃদ্ধ ‘অনন্ত-মহারাণা’রূপ ধরে এসেছিলেন। রাজা প্রতিজ্ঞা পূরণে ব্যর্থ
হওয়ায় শ্রীজগন্নাথদেব অসম্পূর্ণ মূর্তিরূপে প্রকট হয়েছেন। রাজা নিজেকে
অপরাধী মনে করে প্রাণত্যাগ করার সঙ্কল্প করলে শ্রীজগন্নাথদেব স্বপ্নে
রাজাকে দর্শন দিয়ে জানালেন,- “হে রাজন! কোন দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আমি
এইরূপ দারুব্রহ্ম আকারেই ‘শ্রীপুরুষোত্তম’ নামে নীলাচলে নিত্য অধিষ্ঠিত
আছি। আমি এই প্রপঞ্চে আমার শ্রীধামের সাথে ২৪টি অর্চা অবতাররূপে অবতীর্ণ
হই। আমি হস্তপদরহিত হলে, আমি আমার অপ্রাকৃত হস্ত-পদাদির সাহায্যে ভক্তের
সেবা-উপকরণ গ্রহণ করি এবং ভুবনমঙ্গলরূপে সর্বত্র বিচরণ করি। কাজেই আমার
শ্রীমূর্তির অসম্পূর্ণতা আমারই লীলা প্রকটনের একটি প্রমূর্তবিভাস।”
নীলাচল নিবাসায় নিত্যায় পরমাত্মনে৷
বলভদ্র সুভদ্রাভ্যাং জগন্নাথায় তে নমঃ।।